দ্বিগুণ খরচে ২৭৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প ফিরিয়ে দিলো পরিকল্পনা কমিশনঃ বিস্তারিত কমেন্ট বক্সে

 

মা ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিদায়ী সরকারের আমলে ২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। প্রকল্পটির মাধ্যমে ৮তলাবিশিষ্ট ৬২টি নতুন মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের ঊর্ধ্বমুখী সমপ্রসারণ এবং প্রতিটি হাসপাতালে মেডিক্যাল ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের কাজ ছিল। এই প্রকল্পে প্রতি বর্গফুট ভবন নির্মাণে ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ৬ হাজার ৬৫৪ টাকা। অথচ সরকারেরই বিভিন্ন প্রকল্পে নতুন ভবন নির্মাণে প্রতি বর্গফুটে ব্যয় পড়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকার মতো। অন্যদিকে বেসরকারি ভবন নির্মাণেও প্রতি বর্গফুটে ব্যয় পড়ে ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এজন্য নির্মাণ ব্যয় নিয়ে আপত্তি তুলে প্রকল্পটি ফেরত পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ সূত্র জানায়, অত্যধিক ব্যয় প্রস্তাবের কারণে ডিপিপি সংস্কার করে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।  

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৮তলা বিশিষ্ট ৬২টি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এ নির্মাণকাজে ২ হাজার ১৪২ কোটি ৯২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮৪ শতাংশ। প্রকল্পটির ভবন নির্মাণের জন্য প্রতি বর্গফুটে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ হাজার ৬৫৪ টাকা। অথচ বিভিন্ন প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নতুন ভবন নির্মাণে প্রতি বর্গফুটে ব্যয় হয় ২ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ ভবন নির্মাণে দ্বিগুণ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় ২৫ হাজার ৫৩৬টি আসবাবপত্র বাবদ ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার প্রস্তাব রয়েছে। আসবাবপত্রের সংখ্যা ও ব্যয় প্রাক্কলন অত্যধিক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। এছাড়া প্রাধিকার ভিত্তিতে আসবাবপত্র নির্ধারণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে ১জন বহিঃসদস্যসহ কমপক্ষে ৩ সদস্যের একটি বাজারদর কমিটির মাধ্যমে পুনরায় প্রাধিকার বিবেচনায় আসবাবপত্রের সংখ্যা/পরিমাণ ও ব্যয় প্রাক্কলন করার পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এদিকে প্রকল্পের জন্য ৪ দশমিক ৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ১৮ কোটি ৪৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিপত্র অনুসারে প্রস্তাবিত জমির স্থিরচিত্র ডিপিপিতে রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে গাজীপুর ও মানিকগঞ্জে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের বিভিন্ন ভবন সংস্কার/পুনঃনির্মাণে অত্যধিক ব্যয় ধরা হয়েছে।

এদিকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে জেলা পর্যায়ে মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এই কার্যক্রম পরিচালনায় যে সমস্যাগুলো সামনে আসে তার মধ্যে কয়েকটি হলো- পুরাতন ভবনগুলো অধিকাংশই ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরনো এবং জরাজীর্ণ। এছাড়া ভবনগুলো সর্বোচ্চ ১০ বা ২০ শয্যাবিশিষ্ট, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় ডাক্তারের সংখ্যা কম এবং অন্যান্য সাহায্যকারীর সংখ্যা নিতান্তই অপর্যাপ্ত। জরুরি যন্ত্রপাতি ও প্যাথলজি ল্যাবেরও অভাব রয়েছে। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জেলা শহরে বিদ্যমান মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রকে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট (৫০ শয্যায় উন্নতীকরণযোগ্য) মা ও শিশু হাসপাতালে রূপান্তর প্রকল্প নামক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে স্বল্পমূল্যে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। 

অন্যদিকে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় অত্যাধিক বলে মনে করছেন নির্মাণ খাত সংশ্লিষ্টরাও। তারা বলছেন, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও প্রতি বর্গফুটে ব্যয় হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মতো। সেক্ষেত্রে এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় অত্যধিক। বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জিনিসের গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে ব্যয়ের পার্থক্য থাকতে পারে। তবে প্রতি বর্গফুট ভবন নির্মাণে ৬ হাজার ৬৫৩ টাকা খরচ হওয়ার কথা না। ঢাকায় ভবন নির্মাণেও এত টাকা খরচ হয় না বলে জানান তিনি।   

এ বিষয়ে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় অত্যধিক। এছাড়া আসবাবপত্রের সংখ্যা ও ব্যয় প্রাক্কলনও অত্যধিক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। এজন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। উদ্যোগী মন্ত্রণালয়কে সংস্কার করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। 

আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) রেহানা পারভীন বলেন, সব প্রকল্পের ভবন নির্মাণ ব্যয় একই হবে তা ঠিক নয়। ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তরের রেট শিডিউল অনুসরণ করতে হবে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post